নেসাবে তা’লীম – সিলেবাস

জামিয়া কুরআনিয়া ইমদাদুল উলূম ফুলছোঁয়া দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থা ও আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে হিসেবে বলা যায়, দারুল উলূম দেওবন্দের নেসাবে তালীমই অত্র জামিয়ার নেসাবে তালীম। মৌলিকভাবে উভয় নেসাবের মাঝে বড় ধরনের কোন পার্থক্য নেই। দেশ, সমাজ, যুগ ও ভাষার ভিন্নতার দরুণ যতটুকু পরিবর্তন সময়ের দাবী সচেতন উলামায়ে কেরাম সেটুকু উদারমনে গ্রহণ করেছেন।

 

জামিয়ার মূল লক্ষ্য হলো, মুসলমানদের সন্তানদেরকে বিশুদ্ধ ইলমেওহী শিক্ষাদান এবং সে অনুযায়ী আমলী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে সুযোগ্য আলেমে রব্বানী হিসেবে গড়ে তোলা। এই মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের মহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখে জামিয়া তার শিক্ষাব্যবস্থাকে পাঁচটি বিভাগে বিন্যস্ত করেছে। নি সেগুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো :

 

১. নূরানী বিভাগ : এ বিভাগে ছোট ছোট শিশুদেরকে আরবী বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে পবিত্র কুরআনুল কারীম বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারার মত উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। পাশাপাশি প্রথম শ্রেণীর বাংলা, অংক ও ইংরেজী পাঠদান এবং প্রয়োজনীয় মাসায়েল, সকাল-সন্ধার মাসনূন দুআ ও ছোট ছোট হাদীস মুখস্থ করানো হয়।

 

২. নাযেরা বিভাগ : এ বিভাগে ছোট ছোট তালিবুল ইলমদেরকে কুরআনুল কারীম দেখে দেখে দ্রুত পড়তে পারার মত উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। সাথে সাথে দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা, অংক ও ইংরেজী পড়ানো হয়।

 

৩. হিফজ বিভাগ : এ বিভাগে নাযেরা বিভাগের উত্তীর্ণ তালিবুল ইলমদেরকে কুরআনুল কারীম মুখস্থ করানো হয়। মেধা অনুপাতে ছাত্ররা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে হিফজ সম্পন্ন করে থাকে। মাদরাসার মাসিক ইসলাহী মাহফিলে শেষসবক শোনানোর মাধ্যমে তালিবুল ইলমদের ছবক শুনানী শেষ হয়। এবং খতমী ছাত্ররা বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

 

৪. কিতাব বিভাগ : এ বিভাগে তালিবুুল ইলমদেরকে সুযোগ্য আলেমে রব্বানীরূপে গড়ে তোলার জন্য মেহনত করা হয়। আর এই মহান লক্ষ্য অর্জনের জন্য জামিয়া ফুলছোঁয়া জামাত ভিত্তিক (শ্রেণীভিত্তিক) যে পাঠ্যক্রম গ্রহণ করেছে তা নিম্নে প্রদত্ত হলো :

 

১. বাংলা জামাত ৩য় শ্রেণী : এ জামাতে উর্দূ কায়দা, উর্দূ পেহলী ও তালীমুল ইসলাম (১ম ও ২য় খন্ড) সহ তৃতীয়শ্রেণীর বাংলা, অংক, ইংরেজী ইত্যাদি পড়ানো হয়।
২. বাংলা জামাত ৪র্থ শ্রেণী : এ জামাতে উর্দূ দূসরী ও তা’লীমুল ইসলাম (৩য় খন্ড) সহ চতুর্থশ্রেণীর বাংলা, অংক, ইংরেজী ইত্যাদি পড়ানো হয়।
৩. খুসূসী ও তাইসীর : এ জামাতে তাইসীরুল মুবতাদী, ফার্সী পেহলী, উর্দূ তেসরী, তালীমুল ইসলাম (৪র্থ খন্ড),ইসলামী তাহযীব, এবং পঞ্চমশ্রেণীর বাংলা সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, অংক, ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজ পাঠদান করা হয়।

 

৪. মীযান : এ জামাতে মীযান, মুনশাইব, সফওয়াতুল মাসাদির, এসো আরবী শিখি, আততামরীনুল কিতাবী, বেহেস্তী গাওহার, তারীখুল ইসলাম, পান্দে নামা, হেকায়াতে লতীফ, এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা, অংক ও ইংরেজী পড়ানো হয়।

 

৫. নাহুমীর : এ জামাতে নাহুমীর, শরহে মিয়াতে আমেল, সীরাতে খাতামুল আম্বীয়া, রওযাতুল আদব, মা লা বুদ্দা মিনহু, পাঞ্জেগাঞ্জ ও গুলিস্তা এবং সপ্তম শ্রেণীর বাংলা পড়ানো হয়।

 

৬. হোদায়াতুন্নাহু : এ জামাতে হেদায়াতুন্নাহু, ইলমুস সীগাহ্, নূরুল ঈযাহ্, কাইফা নাতাআল্লামুল ইন্শা (১ম খন্ড), তাইসীরুল মানতিক, ক্বালয়ূবী, আলকিরাআতুর রাশেদাহ্, যাদুত তালিবীন ও বোস্তাঁ এবং তাহরীরে উর্দূ পড়ানো হয়।

 

৭. কাফিয়া : এ জামাতে কাফিয়া, কুদূরী, উছূলুস শাশী, মাবাদিউলউসূল, মেরকাত, তালিমুল মুতাআল্লিম, আলক্বিরাআতুর রাশেদাহ্ (২য় খন্ড), তরজমাতুল কুরআনিল কারীম (দ্বিতীয় দশ পারা), আলফিয়াতুল হাদীস ও নাফহাতুল আরব পড়ানো হয়।

 

৮. শরহে জামী: এ জামাতে শরহে জামী , কানযুদ দাকায়েক, নূরুল আনওয়ার (কিতাবুস সুন্নাহ্), শরহুত তাহযীব, দুরুসুল বালাগাহ্ , তরজমাতুল কোরআনির কারীম (শেষ দশ পারা), আতত্বরীক ইলাল ইনশা (১ম ও ২য় খন্ড), লামিয়াতুল মু’জিযা ও আলক্বিরাআতুর রাশেদাহ্ (৩য় খন্ড) পড়ানো হয়।

 

৯. শরহে বেকায়া : এ জামাতে শরহে বেকায়া (১ম ও ২য় খন্ড), মুখতাসারুল মাআনী (ইলমুল মাআনী), আলমা‏কামাতুল হারীরিয়াহ্, নূরুল আনওয়ার (১ম খন্ড), সিরাজী, আতত্বরীক ইলাল ইনশা (৩য় খন্ড), তরজমাতুল কোরআনিল কারীম (প্রথম দশ পারা) ও কুত্ববী পড়ানো হয়।

 

১০. জালালাইন : এ জামাতে তাফসীরে জালালাইন, হেদায়া (১ম ও ২য় খন্ড), মুখতাসারুল মাআনী (ইলমুল বয়ান ও বদী’), মুসাল্লামুস সুবূত, মাইবুযী, সুল্লামুল উলূম, আকীদাদুত ত্বহাবী, আলফাউযুল কাবীর ও দিওয়ানুল মুতানাব্বী পাঠদান করা হয়।

 

১১. মেশকাত : এ জামাতে মেশকাত শরীফ, হেদায়া (৩য় ও ৪র্থ খন্ড), তাফসীরে বায়যাভী, শরহে আকায়েদ, শরহু নুখবাতিল ফিকার,আলফিরাকুল বাতেলা ও তাহরীকে দেওবন্দ পড়ানো হয়।

 

১২. দাওরা: এ জামাতে “সিহাহ্ সিত্তাহ” , ত্বহাবী শরীফ , মুআত্তা মালেক ও মুআত্তা মুহাম্মদ পড়ানো হয়।

 

উপরোক্ত নেসাব বা পাঠ্যক্রমে কুরআন তরজমা, তাফসীর, উসূলে তাফসীর, হাদীস, উসূলে হাদীস, ফিকহ, উসূলে ফিকহ, আকায়েদ, কালাম, বালাগাত, সীরাত, ইতিহাস, ভূগোল, নাহু-সরফসহ কোরআন-হাদীস বুঝতে সহায়ক প্রায় সকল ফন ও শাস্ত্র অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এ শিক্ষা সিলেবাসটি এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে , যাতে পাঠ্য বিষয়ের জ্ঞান আহরণের সাথে সাথে একজন শিক্ষার্থীর মেধাও বিকশিত হতে পারে। এবং যে কোন বিষয় অধ্যয়ন ও অনুধাবনের যোগ্যতা তার মাঝে সৃষ্টি হয়ে যায়। ক্বারী তাইয়্যিব রহ. এর ভাষায়, ‘এ নেসাবটি এজন্য তৈরী করা হয়নি যে, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ের জ্ঞান এ থেকে আহরণ করা হবে; বরং এ নেসাবটি এজন্য তৈরী করা হয়েছে, যাতে সকল বিষয়ের জ্ঞান আহরণের যোগ্যতা ছাত্রদের মাঝে সৃষ্টি হয়ে যায়।

 

তাখাসসুস বিভাগ : দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ তালিমুল ইলমরা যেন নির্দিষ্ট শাস্ত্রে বিশেষজ্ঞরূপে গড়ে উঠতে পারে, এজন্য জামিয়া ফুলছোঁয়াতে তিনটি তাখাসসুস বিভাগ রয়েছে।
১. ইসলামী ফিকহ ও ফাতাওয়া বিভাগ (মেয়াদকাল: ২ বছর)
২. তাফসীর ও উলূমুল কুরআন বিভাগ (মেয়াদকাল: ১ বছর)
৩. আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (মেয়াদকাল: ১ বছর)

 

অদূর ভবিষ্যতে উলূমুল হাদীস, ইলমুল কালাম ও ইলমুত তাজবীদ ওয়াল ক্বিরাআত বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

ঘোষনা

জনপ্রিয় কিতাব সমূহ